৮ই নভেম্বর কলকাতার রাণী রাসমণি রোডে অনুষ্ঠিত হল ‘বঙ্গ প্রাদেশিক ব্যাংকস্ কন্ট্রাক্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (BPBCEA) এর ৪র্থ সম্মেলন। এই সংগঠনটি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর, প্রাইভেট সেক্টর, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও কো-অপারেটিভ ব্যাংকে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। সংগঠনটি বঙ্গ প্রাদেশিক ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (BPBEA) এর সঙ্গে সংযুক্ত, যা অল ইন্ডিয়া ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (AIBEA) এর রাজ্য শাখা হিসেবে কাজ করছে ১৯৪৬ সাল থেকে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন BPBEA এর চেয়ারম্যান ‘কমরেড কমল ভট্টাচার্য। AIBEA-র সভাপতি কমরেড রাজেন নাগর এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। সকলেই কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয়কৃত ব্যাংকগুলির বেসরকারিকরণ নীতি, পদক্ষেপ, এবং সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন।
BPBCEA-র পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ও BPBEA-র যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোহা: শাহাবুদ্দিন তাঁদের বক্তব্যে বলেন, “আমাদের প্রিয় দেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সরকারের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই দেশের ও শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, চুকুরী জীবি, দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষ এবং বেকার শিক্ষিত যুবক ও যুবতীদের স্বার্থবিরোধী”।
২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের সময় সরকার সংসদে প্রকাশ্যে বলে ছিলেন যে ভারতের অর্থনীতি স্থিতিশীল কারণ কেবলমাত্র জাতীয়কৃত ব্যাংকগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু বর্তমান সরকারের ব্যাংক মার্জার ও বিদেশি বিনিয়োগ কারীদের হাতে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির নীতির কারণে আজ দেশের আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে। বিভিন্ন ব্যাংকের কোটি কোটি অনাদায়ী ঋণ খেলাপী দের টাকা আদায় না করে বা তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যাংকের লভ্যাংশ থেকে সেগুলি মকুব করে ব্যাংকের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন এবং প্রচার করছেন ব্যাংকগুলির প্রফিট কমছে সেইজন্য FDA জরুরী এবং বলা হচ্ছে সরকারী ব্যাংকগুলি আশা পূরন করতে ব্যর্থ।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান ব্যাংকের সুদের হার ক্রমাগত কমছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, ছোট-বড় শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। স্থায়ী নিয়োগ ক্রমশ সংকুচিত । সরকার বিভিন্ন দপ্তরে-ব্যাংক, রেল, বীমা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রতিরক্ষা বিভাগে লক্ষাধিক শূন্যপদ স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দ্বারা পূরণ না করে চুক্তিভিত্তিক ও আউটসোর্স কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছে, যেখানে কোনো সুরক্ষা বা ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা নেই।
সম্মেলনে সংগঠনের তরফে সরকারের কাছে নিম্নলিখিত দাবিগুলি তুলে ধরা হয়:
১) শ্রমিকবিরোধী নতুন শ্রম আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
২) ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট আইনের বিভিন্ন ধারার শ্রমিক স্বার্থে পরিবর্তন এবং সংযোজন করতে হবে।
৩) সকল অসংগঠিত শ্রমিক কর্মচারী দের জন্য ন্যূনতম ৭০০০ টাকা পেনশন চালু করতে হবে।
৪) নতুন কৃষি আইন সংশোধন ও সংস্কার কৃষক স্বার্থে করতে হবে।
৫) সরকারি ব্যাংক গুলি বেসরকারিকরণ এবং বিদেশী করণ বন্ধ চক্রান্ত করতে হবে।
৬) সকল বিদেশি ও প্রাইভেট ব্যাংক জাতীয়করণ করতে হবে।
৭) ব্যাংকের সমস্ত শূন্যপদ স্থায়ী কর্মী দ্বারা পূরণ করতে হবে।
৮). চুক্তিভিত্তিক ও ব্যাংক মিত্র কর্মীদের স্থায়ী পদে নিয়োগ করতে হবে।
৯) গ্রাহকদের উপর ব্যাংক সার্ভিস চার্জ সকল ক্ষেত্রে বন্ধ করতে হবে।
১০) বেতন কোড বাতিল করে, সকল চুক্তিভিত্তিক ব্যাংক কর্মীর জন্য কেন্দ্রীয় মজুরি চালু করতে হবে।
১১) প্রতি ব্যাংকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচলিত বেতন দিতে হবে।
BPBCEA নেতৃত্ব জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতেও লড়াই চালিয়ে যাবে জাতীয়কৃত ব্যাংক রক্ষা, শ্রমিকদের অধিকার, গণতন্ত্র সুরক্ষা এবং দেশের আর্থিক স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য। সংগঠনের সভাপতি কমরেড সঞ্জিত চ্যাটার্জী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাটি শেষ করেন।
