ভোজন রসিক বাঙালির কাছে নববর্ষ উদযাপনের প্রধান শর্ত আপোষহীন ভুঁড়িভোজ। বাঙালি একদিকে যেমন খেতে ভালবাসে তেমনি অন্যদের খাওয়াতেও ভালবাসে। দীর্ঘ বারো বছর ধরে সবরকম অনুষ্ঠানে বাঙালির প্রিয় ‘ভেটকি পাতুরি’ থেকে কসমোপলিটান কলকাতাবাসীর ফেবারিট ‘স্মোকড অক্টোপাস’, সকল রসনাতৃপ্তির দায়িত্ত্ব সযত্নে পালন করে আসছে অ্যাসপারগাস হসপিটালিটি। অ্যাসপারাগাস তাদের প্রতিষ্ঠার দ্বাদশবর্ষ উদযাপন করল ৩০শে এপ্রিল কলকাতার পি সি চন্দ্র গার্ডেনে আয়োজিত এক জমজমাট বৈশাখী আড্ডার মাধ্যমে। দ্বাদশবর্ষ উদযাপন ও নববর্ষ পালন এই দুইয়ের সম্মেলন ছিল “বৈশাখী আড্ডা” শীর্ষক এই অনুষ্ঠান| একেতো নববর্ষ তার ওপর বৈশাখী আড্ডা, পুরোটাই বাঙালিয়ানায় ভরপুর | তাই খাওয়া-দাওয়ার মেনুতে যে বাঙালিয়ানা থাকবে এ তো বলাই বাহুল্য। খাওয়া -দাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল বাঙালিআনায় ভরা। শুধু যে বাঙালিয়ানা ছিল এমনটাও কিন্তু নয় যাঁরা একটু ভিন্ন স্বাদের খাবার পছন্দ করেন তাঁদের জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা ছিল। আর এই পুরোটাই খুব সুন্দর এবং নিপুণভাবে সাজিয়েছিল অ্যাসপারাগাস ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ক্যাটারিং সার্ভিসেস |

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় হাস্যকৌতুকের মজাদার উপস্থাপনা দিয়ে এবং অবশ্যই এসপারাগাস ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সার্ভিসেসের নতুন কিছু মেনু নিয়ে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল “রাজবাড়ীর মাংস”। এছাড়াও আঞ্চলিক মেনুর সাথেও গ্লোবাল কুইসিনও ছিল। আঞ্চলিক মেনু মধ্যে নাগাল্যান্ড ও আসামের কিছু পদ, কাশ্মীরের রোগান জোশ প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া যারা গ্লোবাল কুইসিন এর মধ্যে অক্টোপাস, সার্ক, মালবা পুডিং, সেন্ডল, সাকসৌকা, পেজেডিল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মেনুতে চিরচরিত বাঙালিআনার অঙ্গ হিসাবে ছিল আম পোড়ার শরবত, গন্ধরাজ ঘোল, ভেটকি পাতুরি, ডাব চিংড়ি থেকে আমসত্ত্ব চাটনি। চায়ের আড্ডায় চায়ের সাথে টা হিসেবে ছিল – ফিশ বাটার ফ্রাই, চিকেন টেংরি কাবাব, মোচার চপ এবং পটেটো ওয়েজেস । মেন কোর্সের মধ্যে ছিল – বাঙালির প্রিয় লুচি, ছোলার ডাল নারকোল দিয়ে এবং পুলভরা আলুর দম ,ভেটকির পাতুরি, পনিরের পাতুরি, মটন বিরিয়ানি, চিকেন কষা, বাসমতি রাইস, ডাব চিংড়ি, কড়াই পনির,পটলের দোলমা | শেষ পাতি একটু মিষ্টি না হলে চলে? বাঙালির প্রিয় আমের চাটনি ও মসলা পাপড়ের সঙ্গে মিষ্টির মধ্যে ছিল নরম পাকের সন্দেশ, মালাই ফিরিনি, তিরামিশু পেস্ট্রি, তেপ্পাণ্যকি আইসক্রিম এবং অবশ্যই পান।

আড্ডা দিতে দিতে কথা হল অ্যাসপারাগাস ক্যাটারিং এর কর্ণধার প্রীতম দত্তর সাথে। তিনি জানালেন তাঁর ছোটবেলাটা কেটেছে কলকাতায়। তিনি আইএইচএম-তারাতলার প্রাক্তনী। খুব কম বয়স থেকেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ তিনি শুরু করেন। তার প্রথম ব্যবসা শুরু হয় মাত্র ৫০ জন অতিথিকে আপ্যায়ন করে। ক্রমে ৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ জন পর্যন্ত অতিথিকে আপ্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছে উঠেছে তার সংস্থা বিগত বারো বছরে। তাঁদের সফলতার রহস্য জানতে গিয়ে তিনি বলেন যে প্রতিটা কাজেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয় এবং ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। কাজের মধ্যে কখনো সাফল্য থাকে কখনো ব্যর্থতাও থাকে, কিন্তু সবকিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। নেতিবাচক কথাবার্তা থেকে আরও বেশি ইতিবাচক করে তোলার প্রেরণা তিনি পান। আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগামী দিনে কর্পোরেট এবং সোশ্যাল ইভেন্টসও তিনি করতে চান| নতুনদের উদ্দেশ্যে জানান যে, নিজের প্যাশনকে যখন প্রফেশনে আনতে হয় সেটাকে সর্বোচ্চ মান দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হয়।
এবার আসা যাক অ্যাসপারাগাস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে। যদিও এই সংস্থাটি এখন ভোজন রসিকদের অন্যতম ভরসার জায়গা | কিন্তু, এদের কাজ শুরু হয় একটি পশু পাখিদের মেলার মাধ্যমে। পথ চলা শুরু করেন একটি “পেট এক্সিবিশন” দিয়ে। যেখানে কুকুর, বিড়াল, পাখি, মাছ এবং ছোট ছোট পশু পাখিরা উপস্থিত ছিল। একটু ভিন্ন ধরনের কাজ দিয়েই এই পথচলা শুরু। শুধুমাত্র পশুপাখি ছিল তাই নয়, সেখানে পশুপাখিদের ব্যবহৃত খেলনা বা তাদের জন্য ব্যবহৃত বাগানের জিনিসপত্র, বই এবং কেউ যদি কোন পশুকে দত্তক নিতে চায় তারও ব্যবস্থা করা ছিল। ধীরে ধীরে এইভাবেই গড়ে ওঠে এই সংস্থাটি। শুরুটা হয় ২০১২ সালে।
আইএইচএম এর প্রাক্তনী মিঃ প্রীতম দত্ত এরপর শুরু করেন বিশেষ কিছু খাদ্য বিষয়ক উদ্যোগের। এইভাবে পথ চলতে চলতে অবশেষে আহারে বাংলা ২০১৬ এ অংশগ্রহণ করা এবং ২০১৬ থেকে ২০১৯ অব্দি আহারে বাংলার দায়িত্বে ছিল এই সংস্থা। এবং ২০১৮ সালে তারা এর জন্য পুরস্কৃতও হন। এছাড়া বেঙ্গল ফিস ফেস্ট যেটি ২০১৭ থেকে ২০২০ অব্দি এনারা অর্গানাইজ করে থাকেন। মৎস্যপ্রেমীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মৎসের রেসিপি ছিল এই মেলায়। বলাবাহুল্য এখানেও তাঁরা মন জয় করেছিলেন। ২০২০ এবং ২০২১ এই দু বছর করোনা এবং করোনার পরবর্তী সময়ে এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা কিছুটা ক্ষতির মুখোমুখি হয় | কিন্তু, করোনার সময় পেরিয়ে তাঁরা আবার নতুন করে তাঁদের সংস্থা চালু করেন। হায়দ্রাবাদ এবং ব্যাঙ্গালোরে বাঙালি খাবারের ব্যবসা শুরু করেন। এই সংস্থাটি বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এবং ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অফ ইন্ডিয়া, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া প্রমূখ সংস্থার দ্বারা স্বীকৃত। এছাড়া বর্তমানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফ ইন্ডিয়া ইন্ডিয়ার দ্বারা রেজিস্টারপ্রাপ্ত। এছাড়াও এটি আইএসও ২২০০০: ২০১৮ সার্টিফাইড কোম্পানি।
তবে সংস্থাটি শুধুমাত্র যে রন্ধনশিল্পের জন্য বিখ্যাত তা কিন্তু নয় যে কোন অনুষ্ঠানে রান্নার সাথে কিন্তু সৌন্দর্যটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ | তাই কোন বিয়ে, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীতে খাওয়া-দাওয়ার সাথে সাথে অনুষ্ঠানের জায়গাটিও সুন্দর করে সাজানোর পুরো দায়িত্বটাই পালন করে এই সংস্থা|
অ্যাসপারাগাসের আছে নিজস্ব ওয়েবসাইট সেখানে গিয়ে যেকেউ জেনে নিতে পারেন কিভাবে সাজাবেন অনুষ্ঠানের জায়গাটিকে না কিভাবেই বা অভিনব আপ্যায়নে অবাক করে দেবেন অতিথিদের।
আর অ্যাসপারাগাসের খাবার মেনু ও সাজানোর খরচও আছে সবার সাধ্যের মধ্যে। মাত্র ৬৯৫ টাকা থেকে শুরু খাওয়ার প্যাকেজ | এরপর সাধ্যমত বাড়াতে পারবেন আপ্যায়নের বহর।
