প্রকাশিত হল ষোড়শী ভারালিকা মানাকসিয়ার প্রথম কবিতার বই “এভরিথিং উই নেভার সেইড”

ভারালিকা মানাক্‌সিয়া, ষোল বছর বয়সী লা মার্তিনিয়ার ফর গার্লসের ছাত্রী। শনিবার বাড়ির বড়রা যখন বাড়িতে কেউ থাকে না, কম্বলের তলায় নিজেকে গুটিয়ে গরম কফি আর পিৎজা খেতে খেতে বই পড়তে বা টিভি’তে নিজের প্রিয় অনুষ্ঠান দেখতে ভালোবাসা মেয়েটির আত্মপ্রকাশ এই কবিতার বই “এভরিথিং উই নেভার সেইড”-এর মাধ্যমে। এই বইয়ের বেশীরভাগ কবিতা সেই নির্জন মুহূর্তের সৃষ্টি, যেসময় তার সঙ্গী থেকেছে শুধু সে নিজে। লেখালেখি তার অন্যতম ভালোবাসা। একটা সময় তিনি তার মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ জয় করতে পেরেছেন তার লেখার হাত ধরে, তার মনের ভাবনাকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করে। তিনি আশা রাখেন তার এই লেখা অন্য কারোর জীবনেও পরিবর্তন আনবে, যেমন তার নিজের জীবনে এনেছে।

২০২২ সালে এই বইটা লিখতে গিয়ে ভারালিকা মানাকসিয়া অনুভব করেন এই লেখা শুধু তাকে মনের আরাম দিচ্ছে না, যারা তার লেখা পড়ে- তাদেরও আনন্দ দিচ্ছে। এই বইয়ের কবিতাগুলো ওনার কাছে শুধুই একটা সময়ের ছবি নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি। এগুলো ওনার অভিজ্ঞতা এবং ভাবপ্রকাশ। উনি মনে করেন এই কবিতাগুলোর শব্দগুলো দিয়েই উনি তৈরি, তার চিন্তা-ভাবনা, ভালোবাসা আর জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এই কবিতাগুলোর জন্ম। এই কবিতারা তার মনের যাত্রার সঙ্গী।

সদ্য প্রকাশিত বই হাতে ভারালিকা মানাক্‌সিয়া

এই বই লেখার অনুপ্রেরণা তিনি তার কিছু বন্ধু আর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পেয়েছেন, যারা জীবনে অনেক ওঠা-পড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি সবাইকে বলতে চান ওঠাপড়া জীবনের পথচলার অংশ মাত্র- কখনও কেউ যেন হাল না ছেড়ে দেয়। তিনি আশা রাখেন তার এই লেখা সবাইকে উৎসাহের আলো দেখাবে জীবনের পথে চলার সময়। ভারালিকার মতে তার সবথেকে হৃদয়স্পর্শী কবিতা হল “দ্য ডিক্লেয়ারেশন অফ হেট”। তার কথায় “আমি এটা প্রথমবার ২০২২ এর ডিসেম্বর মাসে লিখেছিলাম যখন আমার মানসিক স্থিতি ভীষণ ভাবে খারাপ হচ্ছে। আমি আমার মাকে উদ্দেশ্য করে এই কবিতা লিখি। আসলে আমি মাকে এক প্রকার বোঝাতে চেয়েছি সেই সমস্ত কিছু যেগুলোর কারণে আজকের এই আমি। আশা রেখেছিলাম সেগুলো জানলে উনি আমায় আরও ভালো করে বুঝবেন। যখন আমি ওনার কাছে এই কবিতাটি পড়ে শোনাই আমার মনে আছে কীভাবে কেঁদেছিলেন উনি। অনেকেই এই কবিতাটিকে ঘৃণার কবিতা ভেবে ভুল করতে পারেন, কিন্তু বাস্তবে এই কবিতাটি যন্ত্রণা, বেদনা ও ভালোবাসার যা এক সন্তান চিৎকার করে চাইছে পাওয়ার জন্য”।

এই বইয়ের আরেকটি কবিতা যা লেখিকার হৃদয়ের খুব কাছের তা হল, ” টু দ্য ডে অফ লাইট দ্যাট এওয়েক মি…”। তিনি জানান “এই কবিতাটির অনুপ্রেরণা আমার পুরানো বাড়ি। আমি আমার সমস্ত ছেলেবেলা সেখানে কাটিয়েছি এবং এখন সেটা ছেড়ে এসেছি। এই কবিতাটি আমার সেখানে কাটানো শেষ দিনের স্মৃতি এবং সেই সমস্ত মুহুর্তদের কথা যা আমার শৈশবকে পূর্ণতা দিয়েছে। একটা বাড়ি হয়ত কেবল চার দেওয়ালের কিন্তু আমার কাছে সেটা ঘর। আমি ওই জায়গাটিকেই একমাত্র আমার ঘর হিসাবে আজীবন ভেবে যাব”।

এই বইয়ের প্রতিটা কবিতা শুধুমাত্র তার মানুষ হয়ে ওঠার সাক্ষী নয়, এগুলি তার হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান নিয়ে আছে। এরা সারা জীবন আমার সাথে থাকবে। দশ বছর বয়েসে একবার ক্যাম্পে গিয়ে তিনি ১২০ পাতার একটা বই লেখেন তার স্বপ্ন ছিল সেই লেখা বই আকারে প্রকাশিত হবে আর লেখিকা হিসেবে তার পরিচয় হবে। আজকে তার সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে, যা তার কাছে জীবনের সবচেয়ে গর্বের এক মুহূর্ত।

ভারালিকার “এভরিথিং উই নেভার সেইড” নামক পুস্তক প্রকাশে উপস্থিত ছিলেন গায়িকা মিস জোজো, অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং খ্যাতনামা শিল্প নির্দেশক ও নির্মাতা নীতিশ রায়।