পশ্চিমবঙ্গে ফ্ল্যাট কিনে প্রতারিতদের জন্য এক নতুন আশার খবর। এবার সরাসরি হাইকোর্টে না গিয়েও প্রতারিতরা প্রমোটারের নামে সহজেই অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং পাবেন দ্রুত বিচার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে চলতি বছরের ২০ মার্চ চেয়ারম্যান হিসাবে বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত-র যোগদানে পূর্ণাঙ্গ ভাবে কাজ শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ রিয়েল এস্টেট অ্যাপিলেট ট্রাইবুনাল।

দীর্ঘ এই প্রতীক্ষার নেপথ্যেও ছিল সেই ‘কেন্দ্র বনাম রাজ্য’ দ্বৈরথের অতিপরিচিত গল্প। সংক্ষেপে বলতে গেলে, দেশের আবাসন ক্ষেত্রে ক্রেতাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৬ সালে চালু করে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি (RERA) রেগুলেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এই আইনের আওতায় না এসে ২০১৭ সালে জারি করে পশ্চিমবঙ্গ হাউসিং ইন্ডাস্ট্রি রেগুলেটরি অ্যাক্ট (WB-HIRA)। কিন্তু এই রাজ্য আইন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত ছিল যে এটি ক্রেতাদের চেয়ে নির্মাতাদের বেশি সমর্থন করে। দায়ের হয় জনস্বার্থ মামলা। রাজ্যের তৈরী এই সমান্তরাল ও বিতর্কিত আইন হীরার বৈধতা নিয়ে জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্ট ৪ মে, ২০২১-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ঘোষণা করেন যে হীরা অসাংবিধানিক। বাতিল হয় হীরা। সেই সাথে দ্রুত রেরা ট্রাইবুনাল গঠনের নির্দেশিকা জারি করা হয়। দেশের শীর্ষ আদালতের আদেশ মেনে ওই বছরের জুলাই মাসে রেরা গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার। তিন সদস্য বিশিষ্ট এই ট্রাইবুনালে বিচারবিভাগীয় সদস্য হিসাবে ২০২২ সালে ৩০ ডিসেম্বর প্রাক্তন বিচারক গৌড়সুন্দর ব্যানার্জি এবং প্রশাসনিক সদস্য হিসাবে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন আইএফএস ডক্টর সুব্রত মুখার্জি। তবে চেয়ারপার্সন পদটি ফাঁকাই থেকে যায় আরও একবছর। রেরা আইন অনুযায়ী ট্রাইবুনালের চেয়ারপার্সন পদটিতে নিযুক্ত হতে পারেন হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। অবশেষে সেই নিয়ম মেনেই ট্রাইবুনালের চেয়ারপার্সন হিসাবে নিয়োগ করা হয় কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত মহাশয়কে।
বিচারপতি সামন্ত তাঁর সুদীর্ঘ কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন বিচারব্যবস্থার প্রায় সর্বস্তরের ন্যায়াধীশের পদমর্যাদায়। ১৯৮৮ সালে নিম্ন আদালতে বিচারক পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব সামলেছেন জেলা জজ হিসাবে। ছিলেন কলকাতা সিটি কোর্টের চিফ জাজ। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার ইন্সপেকশন থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে আসীন ছিলেন তিনি। অমায়িক ব্যবহার এবং অসহায় মানুষের প্রতি তাঁর সহমর্মিতার জন্য হাইকোর্টের আইনজীবী মহলে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘জনগণের বিচারপতি’ হিসাবে।
তাই এহেন বিচারপতি সামন্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে নিয়োগ হওয়ায়, ওয়েস্ট বেঙ্গল রিয়েল এস্টেট আপিলেট ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কিনে প্রতারিতরা ন্যায় বিচার পাবেন এটাই প্রত্যাশিত। মাত্র দু মাসের মধ্যেই বেশ কিছু মামলার কার্যকরী রায়দান করেছে এই আপিলেট ট্রাইবুনাল। সম্প্রতি হাওড়ার শিবপুরে একই ফ্ল্যাট একাধিক জনকে বিক্রি করার জন্য অভিযুক্ত প্রমোটারকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ মেটানোর নির্দেশ দেয় এই আপিলেট ট্রাইবুনাল। কলকাতার সন্তোষপুরে ইএম বাইবাসের ধারে সার্ভে পার্ক এলাকায় রয়েছে রেরার অফিস। কলকাতা সহ রাজ্যের সকল জেলার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে পারবেন রেরার অফিসে।