গত ৪ ঠা সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দি এশিয়াটিক সোসাইটি এবং ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল রিফর্ম এণ্ড রিসার্চ-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হল ‘গবেষণা-পত্র লেখার কৃৎকৌশল ও শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের সুফল ও কূফল’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক কর্মশালা। এই কর্মশালায় মুখ্য দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রথমত, গবেষণাপত্রের মানোন্নয়ন ও গবেষণাপত্র লেখার কৃৎকৌশল। আর দ্বিতীয়টি ছিল বিশ্বজোড়া বিতর্কিত বিষয় শিক্ষা ও গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযোগের সুফল, কুফল এবং যৌক্তিকতা বিষয়ক। সেই পুরাতন বিতর্কের ট্রেডডিশন আজও বহমান “বিজ্ঞান আশীর্বাদ, না অভিশাপ”; এর নবতম পর্যায় “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অভিশাপ, না আশীর্বাদ” রূপে!!
এই কর্মশালা ভারতের ১৩ টি রাজ্য সহ পাঁচটি দেশ সৌদি আরব, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশের চল্লিশটিরও বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় শতাধিক গবেষক অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এই কর্মশালার শুভ উদ্বোধন করেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক স্বপন কুমার প্রামাণিক। তিনি প্রশ্ন তোলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যথেচ্ছ প্রয়োগ বিষয়ে এবং সতর্ক করে দেন এর অযৌক্তিক প্রয়োগ বিষয়ে। মানব বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রন ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করেদেন।
স্বাগত ভাষণে এশিয়াটিক সোসাইটির ডিরেক্টর তথা প্রসাশক লেপ্টিন্যান্ট কর্নাল অনন্ত সিনহা বলেন বিশ্বজোড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে সাথে তাল মিলিয়ে ভারতকে এগোতে হবে বিশ্বজোড়া প্রতিযোগিতায়। উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত নব নব আবিষ্কারের প্রায়োগিক দিকগুলি সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর এই নব নব আবিষ্কার ও তার প্রায়োগিক দিকগুলিতো গবেষণালব্ধ ফলাফল। তাই শিক্ষাবিদদের তত্ত্বাবধানে গবেষকরা নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করবেন এটাই কাম্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রানী ও মৎস-বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথির ভাষন দেন মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের প্রাক্তন বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক সুধাকর সি আগারকর। তিনি প্রথমে প্রাক-শিক্ষক-দিবস উদযাপন করে সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের স্মরণে বক্তব্য রাখেন, তারপর গবেষণাপত্র লেখার কৃৎকৌশল নিয়েও দিক নির্দেশ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত “আই.আই.এস.আর.আর. ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব রিসার্চ” শিরোনামের একটি রিসার্চ জার্নালের প্রিন্ট এবং ইন্টারনেট ভার্সন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অধ্যাপক স্বপন কুমার প্রামাণিক, লেপ্টিন্যান্ট কর্নাল অনন্ত সিনহা এবং সভায় উপস্থিত শিক্ষাবিদরা।
এই কর্মশালার অধিকর্তা তথা ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল রিফর্ম এণ্ড রিসার্চ এর ডিরেক্টর অধ্যাপক অসিত কুমার দাস তার প্রারম্ভিক ভাষনে এবং হাতে নাতে করিয়ে দেখান কিভাবে প্রকাশযোগ্য গবেষণাপত্র রচনার পর্যায়-বিন্যাস এবং প্রায়োগিক কৌশলগত বিভিন্ন দিক। অধ্যাপক দাস বলেন আধুনিক পৃথিবীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রমরমা যথেচ্ছ বাণিজ্য প্রসারের প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্মের গবেষকদের ভারতে হবে তাদের গবেষণায় কার প্রাধান্য থাকবে? ‘মানবিক-বুদ্ধিমত্তা (এইচ.আই)’, না কি ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ.আই)’??
তিনি স্মরণ ও সতর্ক করিয়ে দেন যে আমরা চাই বা না চাই, গবেষণা তথা শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ অবশ্যম্ভাবি। কিন্তু কখনোই সম্পূর্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর হওয়া উচিৎ নয়; তা খুবই বিপজ্জনক; মানব বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ছাড়া শিক্ষা ও গবেষণায় উন্নয়ন ও বুৎপত্তি মূলক উৎকর্ষতা কখনোই সম্ভব নয়। কারন শিক্ষা ও গবেষণায় যে আদর্শ, মূল্যবোধ, আবেগ প্রভৃতি মানবিক গুণাবলী ও প্রাক্ষোভিক দিকগুলি একান্ত প্রয়োজন তা একমাত্র মানবিক-বুদ্ধমত্তা সম্পন্ন শিক্ষক দিতে পারেন; তা কখনোই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবোট-শিক্ষক দিতে পারেনা। কারন এ-আই এটা ডাটা-প্রনোদিত, এবং মানবিক গুণাবলী হীন। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ছাত্রছাত্রীদের আর্থ-সামাজিক দিক ভেবে শিক্ষক পাঠপরিকল্পনা করেন; কিন্তু ক্রিত্রিম-বুদ্ধিমত্তা তা করতে পারেনা।
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্যায়ে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক স্বপন কুমার প্রামাণিক। এই পর্বে হাতেকলমে কিভাবে মানব-বুদ্ধিমত্তার তত্ত্বাবধানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগে প্রযুক্তিগত পদ্ধতির প্রয়োগ বিষয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক অসিত কুমার দাস, মুম্বাইয়ের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপিকা সীমা পুরোহিত, কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবশংকর জানা এবং চেন্নাইয়ের আল্লা ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সাইন্সের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক টি. ভি. গোপাল।
কর্মশালার তৃতীয় পর্যায়ে সভাপতিত্ব করেন কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক দিলীপ কুমার মহোন্ত এবং সহযোগী সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ মদনমোহন চেল। এই পর্যায়ে ভারতের ১৩ টি রাজ্য সহ পাঁচটি দেশ সৌদি আরব, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশের চল্লিশটিরও বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৭ জন গবেষক ও অধ্যাপক তাদের গবেষণাপত্রের সারাংশ উপস্থিত করেন। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের শংসাপত্র প্রদান করা হয়।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এশিয়াটিক সোসাইটির প্রসাশনিক আধিকারিক শ্রী অরূপরতন বাগচী এবং ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিফর্ম এণ্ড রিসার্চ এর সম্পাদক ড: নিবেদিতা সরকার (তালুকদার)। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল রিফর্ম এণ্ড রিসার্চ এর ডিরেক্টর অধ্যাপক অসিত কুমার দাস। সঞ্চালনা করেন শবনম খাতুন এবং ডঃ রুদ্রপ্রসাদ সাহা।