১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধেয় আকাদেমি অব ফাইন আর্টস (কলকাতা) এ কালিন্দী নাট্যসৃজনের ২৩ তম জন্মদিন পালিত হল। প্রতিবছরই বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের দীপ্তিময় চট্টোপাধ্যায় নাট্য সম্মান প্রদান করা হয়। এবছর ‘দীপ্তিময় চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি সম্মান’ পেলেন বিশিষ্ট নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক গৌতম মুখোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত এই ২৩ বছরে কালিন্দী নাট্যসৃজন ১৪ টি পূর্ণাঙ্গ ও ৬ টি ছোট নাটক প্রযোজনা করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিষ্কৃতি কবিতা অবলম্বনে নাটক নিষ্কৃতি, শেক্সপিয়ারের দি মার্চেন্ট অফ্ ভেনিস, রমাপ্রসাদ বণিকের মনসারানি, মোহন রাকেশের আষাঢ়ের প্রথম দিনে।
শান্তিনিকেতনের লিপিকা, সৃজনী শিল্পগ্রাম, তেপান্তর নাট্যগ্রাম সহ অন্যান্য জেলার প্রেক্ষাগৃহেও তারা নাট্যমেলা করেছে। প্রতিবছর থিয়েটার সেমিনার আয়োজন সহ নাটককে কেন্দ্র করে আরও নানা ধরনের কাজ করে চলেছে। এদিন কালিন্দী নাট্য সৃজনের জন্মদিনের বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাদের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল বিল্বদল চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘পটের বিবি’ নাটকটি। রচনায় উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। এক কথায় এই নাটককে মিউজিকাল ড্রামা বলা যেতে পারে। কারণ নাটকে রয়েছে একাধিক গানের ব্যবহার, যার সবটাই লাইভ মিউজিক। মুরারী রায়চৌধুরীর করা সঙ্গীত প্রসংশার দাবি রাখে।
সময়টা ১৮০২। ব্রিটিশ আমল। তৎকালীন সময়ের একজন বিখ্যাত কবিগান শিল্পী ছিলেন রাম বসু। তার একজন উপপত্নী ছিল সুরধুণী নামে। সে যেমনি গান গাইতে পারতো আবার অনায়াসেই কোনো গানের কথায় সুর বসিয়ে দিতে পারতো। যদিও ইতিহাসে তার নাম ছিল যজ্ঞেশ্বরী। তিনি রাম বসুর সাথে গান গেয়ে বিখ্যাত হতে চেয়েছিলেন। রাম বসু কখনও তার গুনের স্বীকৃতি দেননি। এখান থেকেই শুরু হয় মত বিরোধ। ঘটনাচক্রে সুরধুণী একদিন অ্যান্টনি নামে এক জনপ্রিয় তরজা গান শিল্পীর সঙ্গে কবি গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। রাম বসুর অনুমতি ছাড়াই সুরধুণী এতে অংশগ্রহণ করে। অ্যান্টনি সুরধুণীকে সম্মান জানায়। তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। এরপর সুরধুণীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে জোসেফ শেফার্ডের। যে সুরধুনীকে গায়িকা থেকে মডেলে পরিণত করেন। সুরধুনী মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এবং ত্যাগ করে রাম বসু কে। সুরধুনী চরিত্রে অভিনয়ে নজর কাড়েন ঊর্নাবতী সেন। রাম বসুর চরিত্রে ভালো লাগে অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়। উল্লেখের দাবি রাখে ভদ্রকালী চরিত্রে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, অ্যান্টনি চরিত্রে অচিন্ত্য মজুমদার এবং জোসেফ শেফার্ডের চরিত্রে বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন শর্মিষ্ঠা বসু, শুভরাজ মল্লিক, রণদীপ নন্দী প্রমুখ। আলোক পরিকল্পনায় বাবলু সরকার। মঞ্চ পরিকল্পনায় অশেষ কর্মকার ও রণদীপ নন্দী, মঞ্চ নির্মাণের মদন হালদার, পোশাক পরিকল্পনায় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।